(+88) 01715 177776      contact@obonil.com

News Detail

নিরাপত্তার জন্য সাদ্দামের “সেলফ প্রটেক্ট” অ্যাপ

Publish at October 04, 2016


(প্রিয় টেক) নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। মানুষের জীবনের একটি অন্যতম গুরত্বপূর্ণ বিষয় হল তার নিরাপত্তা। বহুকাল ধরেই গবেষণা চলছে কীভাবে মানুষের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করা যায়। কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে প্রায় সময়ই চাকরিজীবীদের সন্ধ্যা বা রাত হয়ে যায়। বাড়ি ফেরার পথে নিরাপত্তার একটা ঝুঁকি তো থাকেই, বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের। দূরবর্তী কোনো এলাকায় বাড়ি হলে গাড়ি পেতেও অনেক সময় লেগে যায়। সব মিলিয়ে সন্ধ্যার পর ছিনতাইকারী বা দুষ্কৃতকারীদের উৎপাতের একটা আশঙ্কা থাকে। একা চলাফেরার সময় দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণের শিকার হলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেবা পাওয়ার একটি উপায় হচ্ছে ”সেলফ প্রটেক্ট” অ্যাপ। অ্যাপটি উদ্ভাবন করেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো: সাদ্দাম হোসেন (শাহীন)। এই উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বদ্যিালয় কতৃপক্ষ তাকে ১০০% ওয়েবার দিয়েছেন। সাদ্দাম বলেন, ২০১২ সালে একদিন ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মোবাইল ফোন ও টাকা খোয়ান । এরপর তিনি ভাবতে থাকেন জিপিএস প্রযুক্তির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ও নিজের পরিবার-বন্ধুদের সংযুক্ত করা গেলে নিরাপত্তার বিষয়টি কিছুটা হলেও নিশ্চিত করা যায়। সাদ্দাম ২০১৪ সাল থেকে সেলফ প্রোটেক্ট’র কাজ শুরু করেন। ২০১৪ সালের আইসিটি বিভাগ থেকে পরিচালিত অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে এই আইডিয়ার কথা তার প্রশিক্ষকদের জানান, তারা তাকে ই আইডিয়াকে অ্যাপ এ রুপান্তরিত করার জন্য উৎসাহিত করেন, একইসঙ্গে সহযোগিতাও করেন। ছোট্ট প্রশিক্ষণ আর ইন্টারনেট থেকে গাইড নিয়ে শুরু হয় সাদ্দামের অ্যাপ তৈরির কাজ। তিনি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর (সিএসই) ছাত্র হওয়ায় তার জন্য কাজটি আরও সহজ হয়ে যায়। এখনও অ্যাপটির আরো উন্নত সংস্করণ তৈরিতে কাজ করছেন। অ্যাপটি জননিরাপত্তামূলক ও অপরাধ দমন-সংক্রান্ত হওয়ায় গুগল প্লে-স্টোর বা অন্যান্য মার্কেটপ্লে­সে দিতে গেলে পুলিশ সদর দপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কারণ, অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা প্রথমে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাবে এবং সঙ্গে পরিবার ও বন্ধুদের জানাবে এবং আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিটির সহায়তায় এগিয়ে আসবে। এ জন্য তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১০০০ ইনোভেশন, ২০২১ প্রকল্পে এই উদ্ভাবনে অনুদানের জন্য ও পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করেছেন অ্যাপটির ডেভোলপার সাদ্দাম। অ্যাপটি কিভাবে কাজ করবে “সেলফ প্রটেক্ট” অ্যাপটি প্রথমে স্মার্টফোনে ইনস্টল করতে হবে। এর দুটি অংশ। একটা হচ্ছে ক্লায়েন্ট বা ইউজার অ্যাপস, যা ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনে থাকবে। আরেকটি হচ্ছে ওয়েব অ্যাপ বা নোটিফিকেশন রিসিভার অ্যাপ, যেটি পুলিশের কাছে বা পুলিশ স্টেশনে থাকবে। এরপর অ্যাপটি অ্যানাবেল (সক্রিয়) করতে হবে। নির্দিষ্ট সেটিংস বাটনে জেনারেল ও অ্যাভান্সড সেটিংস এ ব্যবহারকারী নোটিফিকেশনে কি কি পাঠাতে চাই যেমন লোকেশন, আইএমআই, অডিও,ভিডিও,ছবি,ফোন নাম্বার, সোস্যাল মিডিয়াতে নোটিফিকেশন পোস্ট ইত্যাদি) সেগুলো বক্সে টিক চিহ্ন দিয়ে অন করতে হবে ও অ্যাপসটি সক্রিয় রাখতে হবে। সেবা পাওয়ার জন্য অ্যাপসটিকে সব সময় সক্রিয় রাখতে হবে, যাতে করে যে কোনো বিপদের সময় নির্দিষ্ট পাওয়ার বাটনটি পরপর ৪-৫ বার চাপার সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে ও অ্যাপ এ সরবরাহকৃত পরিবার ও বন্ধুদের নাম্বারে প্রয়োজনীয় তথ্যসহ বার্তা (নোটিফিকেশন) পৌঁছে যাবে। নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে পৌছার জন্য নোটিফিকেশনটি সেন্ট্রাল সার্ভার এ পৌছাবে তারপর অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিকটিমের নিকটস্থ থানার ওয়েব অ্যাপ পৌছাবে। র্ বিপদে পড়লে বা অপরাধীদের আক্রমণের শিকার হলে আক্রান্ত ব্যক্তি তার কাছে মোবাইল ফোনে থাকা সেলফ প্রোটেক্ট অ্যাপের নির্দিষ্ট পাওয়ার বাটনটি চাপলে অ্যাপটি প্রথমে ব্যক্তির সবচেয়ে কাছের পুলিশ স্টেশনটির ওয়েব অ্যাপ খুঁজে বের করবে সেন্ট্রাল সার্ভার। তারপর জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত করে পুলিশ স্টেশনের সার্ভারে জানাবে। ব্যবহারকারী যে এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেখানকার আশেপাশের শব্দ ও ছবি ধারণ করে পুলিশ স্টেশনে পাঠাবে অ্যাপটি, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির সাহায্যার্থে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে। পুলিশ স্টেশনের অ্যাপের সঙ্গে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছেও একই বার্তা মোবাইলে পৌঁছে যাবে টেক্সট মেসেজ আকারে। সার্ভারে পৌঁছানোর পর সংশ্লিষ্ট থানায় দায়িত্বরত নির্দিষ্ট সংখ্যক অফিসারের মোবাইল নম্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির নোটিফিকেশনটি টেক্সট মেসেজ আকারে পৌঁছে যাবে। সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপ ইনস্টল করা থাকলে ফোনটি থেকে সিম পরিবর্তন করলে নতুন সিম নাম্বার, আইএম আই,লোকেশেন পরিবার-বন্ধুদের নাম্বারে নোটিফিকেশন আসবে। যাতে করে হারিয়ে যাওয়া ফোনটি কোন সিম ব্যবহার হচ্ছে সনাক্ত করা ও খুজে পাওযা সম্ভব। অ্যাপটি ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীর কোনো ইন্টারনেট কানেকশন বা ডাটা অন থাকার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট কানেকশন অফ থাকলেও জিপিএস চালু থাকার কারণে সার্ভিস প্রোভাইডার বা মোবাইল অপারেটরের সাহায্যে বার্তাটি পুলিশ স্টেশনে পৌঁছাবে। তবে সার্ভার অ্যাপ্লিকেশন বা পুলিশের কাছে থাকা অ্যাপে ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে, যেন ব্যবহারকারী বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ বার্তাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধ সংঘটিত হওয়ার স্থানটি গুগল ম্যাপে দেখে শনাক্ত করা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি একবার নির্দিষ্ট পাওয়ার বাটন প্রেস করার মাধ্যমে যেভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য পুলিশের কাছে পৌঁছে যাবে, তেমনি ছিনতাইকারীরা ওই ব্যক্তির হ্যান্ডসেট থেকে সিম পরিবর্তন করলেও নির্দিষ্ট সময় পরপর ছিনতাইকারীর অবস্থানের তথ্য নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনের সার্ভারে আসতে থাকবে। স্মার্টফোন ছাড়া সাধারণ ফিচার ফোনগুলোর জন্য সেটআপ টেক্সট অপশন থাকবে, যাতে করে টেক্সটটি নির্দিষ্ট এসএমএস সার্ভার নম্বরের মাধ্যমে পুলিশের সার্ভারে পৌঁছে যাবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের তুলনায় ফিচার ফোন ব্যবহারকারীরা একটু দেরিতে সেবা পাবেন। অ্যাপটি ডেভেলপ করা হয়েছে অ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের জন্য। এর পাশাপাশি উইন্ডোজ আর আইওএসের জন্যও অ্যাপটি ডেভেলপ করার কাজ চলছে। এছাড়া অ্যাটিতে ইমারজেন্সী সার্ভিস যেমন হাসপাতাল,ফায়ার সার্ভিস, কোন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ, পরামর্শ ইত্যাদি করা যাবে। নিকটস্থ প্রয়োজনীয় সেবা সমূহ খুজে পাওয়া সম্ভব হবে সার্চ নেয়ারেস্ট বাটনে ক্লিক করে। কোন বিষয় সার্ভারে সরাসরি পাঠানেরা জন্য লাইভ স্ট্রিমিং বাটনে এ ক্লিক করলে সেবা পাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও জনসাধারণের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আরো কিছু ফিচার যোগ করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সরকারিভাবে অ্যাপটি বাস্তবায়ন ও কার্যকরী করার কথা সাদ্দাম কে জানিয়েছেন। এছাড়া, পুলিশের সিআইডি হেড কোয়ার্টারের সাইবার ক্রাইম ইনফরমেশন সেন্টার থেকে অ্যাপটি পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে ইতিবাচক অনুমতি দিয়েছে। সরকারের চূড়ান্ত অনুমতি সাপেক্ষে অ্যাপটি মার্কেটপ্লেসে আনা হবে বলে জানান সাদ্দাম।