(+88) 01715 177776      contact@obonil.com

News Detail

মেহেরপুরের তরুণ বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত মোবাইল অ্যাপস অপরাধী ধরতে সাহায্য করবে

Publish at July 21, 2016


॥ দিলরুবা খাতুন ॥ মেহেরপুর, ২১ জুলাই ২০১৬ (বাসস):

বর্তমান সরকার যখন দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ডিজিটাল বংলাদেশ গড়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ঠিক তখনই এক শ্রেণীর লোক এটাকে ব্যর্থ করতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের এই সংকটময় অবস্থা থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মুক্ত করতে মেহেরপুরের এক তরুণ বিজ্ঞানী আবিস্কার করল ‘সেলফ প্রটেক্ট’ মোবাইল অ্যাপস। এই ‘সেলফ প্রটেক্ট’ মোবাইল অ্যাপস-এর সাহায্যে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, উত্ত্যক্তকারীসহ যে কোন ধরনের অপরাধীকে ধরতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করবে। মোবাইলে এ অ্যাপসটি সংযুক্ত করে নির্দিষ্ট বাটনে চাপ দিলেই যে কেউ এ সুবিধা পাবে। এ অ্যাপসটির উদ্ভাবন করেছেন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাবুপুর গ্রামের জামাত আলীর ছেলে সাদ্দাম হোসেন (শাহীন)। সাদ্দাম হোসেন বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। অ্যাপসটির দুটি অংশ। একটা হচ্ছে ক্লায়েন্ট বা ইউজার অ্যাপস বা সবার কাছে যে অ্যাপসটি থাকবে সেই অ্যাপসটি আরেকটা হচ্ছে সার্ভার অ্যাপস বা নোটিফিকেশন রিসিভার অ্যাপস যেটি পুলিশের কাছে বা পুলিশ স্টেশনে থাকবে। এরপর অ্যাপসটি ইনএবল (সক্রিয়) করতে হবে। নির্দিষ্ট বক্স আছে ওখানে টিক চিহ্ন দিয়ে সক্রিয় রাখতে হবে। অ্যাপসটির সেবা পাওয়ার জন্য অ্যাপসটিকে সব সময় সক্রিয় রাখতে হবে। যাতে করে যেকোন বিপদের সময় নির্দিষ্ট পাওয়ার বাটনটি পরপর চার বার চাপার সাথে সাথে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে এ প্রয়োজনীয় তথ্যসহ বার্তা (নোটিফিকেশন) পৌঁছাবে। প্রথমে বিপদে পড়লে বা অপরাধীর আক্রমণে পড়লে ভিকটিমের কাছে থাকা মোবাইল ফোনের বাটন চাপার মাধ্যমে অ্যাপসটি প্রথমে খুঁজে বের করবে যে ভিকটিম ব্যক্তির সবচেয়ে কাছের পুলিশ স্টেশনটির অ্যাপ কোনটি। তারপর সেই অ্যাপসটিতে বা ভিকটিমের (ক্ষতিগ্রস্ত) অ্যাপের মাধ্যমে জিপিএস (গ্লোবাল পজিসনিং সিস্টেম) এ ট্র্যাক বা চিহ্নিত করবে ক্ষতিগ্রস্ত’ ব্যক্তিটি কোন জায়গায় অবস্থান করছে। তারপর সেই জায়গার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ সহ অ্যাপের মাধ্যমে ভিকটিমের আশপাশের শব্দ রেকর্ডিং বা ধারণ ও ছবি সংগ্রহ করে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনের অ্যাপ এ প্রেরণ করবে। এই বার্তা বা নোটিফেকেশন পাওয়ার পরপরই সার্ভার বা রিসিভার বা পুলিশের কাছে বা পুলিশ স্টেশনে থাকা অ্যাপে পপ-আপ শব্দ করে জানিয়ে দেবে। এর পর মোবাইলের বা স্মার্টফোনের পর্দায় বা ড্যাশবোর্ডের স্ক্রিনে ভিকটিমের অবস্থানরত এলাকার মানচিত্র, ধারণকৃত ছবি (ফুটেজ), শব্দ শোনা যাবে। যাতে করে পুলিশ প্রশাসন ভিকটিমকে দ্রুত সাহায্য ও উদ্ধার করতে পারবে। এবং পুলিশ স্টেশনের অ্যাপের সাথে দায়িত্বরত বা কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছেও একই বার্তা পৌঁছাবে। সার্ভারে পৌছানোর পর ক্যাম্প ইনচার্জ , ডিউটি অফিসার ,অফিসার ইনচার্জ সহ নির্দিষ্ট সংখ্যক মোবাইল নম্বরে ভিকটিমের নোটিফিকেশনটি টেক্সট আকারে পৌঁছে যাবে। অ্যাপসটি ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীর কোন ইন্টারনেট কানেকশন বা ডাটা অন থাকা লাগবে না। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট কানেকশন অফ থাকলেও জি.পি.এস. অন থাকার জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার বা মোবাইল অপারেটরের সাহায্যে বার্তাটি পুলিশ স্টেশনে পৌঁছোবে। তবে সার্ভার অ্যাপ্লিকেশনে বা পুলিশের কাছে থাকা অ্যাপে ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে, যেন ব্যবহারকারী বা ভিকটিমের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সমৃদ্ধ বার্তাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌছানোর সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধ সংঘটিত স্থানটির গুগল মানচিত্রটি স্ক্রিনে দেখা যাবে। ভিকটিমের একবার বাটন প্রেস করার মাধ্যমে যেমন প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পুলিশের কাছে পৌছে যাবে তেমনইভাবে ছিনতাইকারী ফোন থেকে সিম পরিবর্তন করলে নির্দিষ্ট সময় পরপর ভিকটিমের অবস্থান নিকটস্থ পুলিশ সার্ভারে আসতে থাকবে। যাতে করে ছিনতাই হওয়া ফোনটি উদ্ধার ও ছিনতাইকারীকে সহজে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। অ্যাপসটিতে ব্যবহারকারীর জন্য টেস্ট মুড ও রিয়েল মুড অপশনও রাখা হয়েছে। যেন ব্যবহারকারী অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার থেকে রক্ষা পায়। স্মার্টফোন ব্যতিত সাধারণ ফিচার ফোনগুলোর জন্য সেট আপ টেক্সট অপশন থাকবে যাতে করে টেক্সটটি নির্দিষ্ট এসএমএস সার্ভার নাম্বারে মাধ্যমে পুলিশের সাভারে পৌছে যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে স্মার্টফোনের তুলনায় সাধারণ ফোন ব্যবহারকারীরা একটু দেরীতে সেবা পাবে। তবে অ্যাপসটির অপব্যবহার করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীর তথ্য পুলিশের কাছে চলে যাবে। কারণ অ্যাপসটি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। সাদ্দাম হোসেন বলেন, ২০১২ সালে জিপিএস ব্যবহার করে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির অবস্থান জানার আগ্রহ থেকেই জননিরাপত্তামূলক সফটওয়ার (অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার) তৈরি করার কাজ করতে শুরু করি। এ আইডিয়া থেকেই আজ আমি অপরাধ দমন ও নিরাপত্তামূলক মোবাইল অ্যাপ ‘সেলফ প্রটেক্ট’টি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছি। এখন সরকার যদি আমার উদ্ভাবিত এই অ্যাপসটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে অনুমতি ও অ্যাপসটির নির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা দূর করতে এবং অ্যাপসটির উন্নতি সাধনে সার্বিক সহযোগিতা করেন, তাহলে আমাদের স্বপ্নের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আরো একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে এবং আমার উদ্ভাবন সার্থক হবে। মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলম বলেন, কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই অপরাধীরা অপরাধ কর্মকান্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এই সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপস চালু হলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারবে এবং ভিকটিমকে রক্ষা করতে পারবে।